সাক্ষাৎকার

আর্থিক খাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিনিয়োগ শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীমঃ অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম

‘আর্থিক খাতে আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিনিয়োগ শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। একটি দেশের উন্নয়নে তার বিভিন্ন সেক্টরে সাহায্য করে দেশটির আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ। এসব প্রতিষ্ঠানসমূহকে একটি শক্তিশালী অবস্থানে থাকতে হয়, যাতে সারাবছর জুড়েই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প-বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে পারে। তাই শিল্পবিপ্লব ও অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য যেসব পদক্ষেপই নেওয়া হোক না কেন, সেসব পদক্ষেপ বাস্তবায়নে বেশি জরুরী ফিনান্সিয়াল ইন্সটিটিউশনগুলোকে শক্তিশালী ও তাদের রেগুলেটরগুলোকে ইনোভেটিভ করে গড়ে তোলা। এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশীজনদেরও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকা, বিচার-বিশ্লেষণ বুঝা এবং পরিবর্তনশীল ও সময়োপযোগি সিদ্ধান্ত নিতে পারাটাও এক্ষেত্রে অনেক বেশি জরুরী। আর এসব কাজ তরান্বিত করতে সবার আগে দরকার এ সংক্রান্ত শিক্ষার প্রসার। তাই অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি বিনিয়োগ শিক্ষা বা ফিনান্সিয়াল লিটারেসির প্রসার সম্পর্কে আমাদেরকে আরও বেশি পদক্ষেপ নিতে হবে। যত বেশি মানুষকে আমরা এই শিক্ষার আওতায় নিয়ে আসতে পারবো, ততই আমাদের দেশের অর্থনীতি ও পুঁজিবাজারের জন্য মঙ্গলজনক হবে।’

 

বিনিয়োগবার্তা’র সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এসব কথা বলেছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বিনিয়োগবার্তা’র সম্পাদক শামীম-আল-মাসুদ। আর সহয়োগিতায় ছিলেন বিনিয়োগবার্তা’র স্টাফ ফটোগ্রাফার মঞ্জুরুল রেজা।

 

বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের দেশের অর্থনীতি যেভাবে এগিয়ে চলছে তাতে অচীরেই বাংলাদেশ বিশ্বে নতুন উচ্চতায় আভির্ভূত হবে। এ অবস্থান আরও তরান্বিত হতো যদি চলমান কোভিড-১৯ না আসতো। এই কোভিডের ফলে শুধু বাংলাদেশই নয়, বিশ্বের অনেক বড় বড় অর্থনীতির দেশও স্লথ গতিতে পড়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের উন্নয়নের যে গতি সেটা খুব শিগগীরই আবার ফিরে আসবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

 

‘শিল্প বিপ্লব ও অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য যেসব পদক্ষেপই নেওয়া হোক না কেন, সেসব পদক্ষেপ বাস্তবায়নে বেশি জরুরী ফিনান্সিয়াল ইন্সটিটিউশনগুলোকে শক্তিশালী ও তাদের রেগুলেটরগুলোকে ইনোভেটিভ করে গড়ে তোলা। এক্ষেত্রে আরও কি কি নতুন আইটেম, নতুন নতুন টুলস, নতুন নতুন প্রোডাক্ট, নতুন নতুন রুলস-রেগুলেশনস নিয়ে আসা যায় তা নিয়ে রেগুলেটরগুলোকে ভাবতে হবে।’

 

তিনি বলেন, একটা দেশের উন্নয়নে তার বিভিন্ন সেক্টরে সাহায্য করে দেশটির আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ। এসব প্রতিষ্ঠানসমূহকে একটি শক্তিশালী অবস্থানে থাকতে হয়, যাতে সারাবছর জুড়েই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প-বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে পারে। তাই শিল্প বিপ্লব ও অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য যেসব পদক্ষেপই নেওয়া হোক না কেন, সেসব পদক্ষেপ বাস্তবায়নে বেশি জরুরী ফিনান্সিয়াল ইন্সটিটিউশনগুলোকে শক্তিশালী ও তাদের রেগুলেটরগুলোকে ইনোভেটিভ করে গড়ে তোলা। এক্ষেত্রে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোকে ফলো করা যেতে পারে। তবে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে যে, এক দেশের নীতি-পলিসি আবার অন্য দেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় না। তাদের অনেক ভাল-ভাল আইন-কানুন আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে অনেক ক্ষতির কারণ হতে পারে। এক্ষেত্রে তাদের শিক্ষা ও গবেষণালব্ধ পদক্ষেপসমূহ বিবেচনায় নিয়ে আমাদের বাজার পরিস্থিতির সাথে সঙ্গতি রেখে নীতি-পলিসি তৈরি করতে হবে। আমাদের চিন্তা করতে হবে কোন ধরনের পদক্ষেপ আমাদের বাজার প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ, কোনটি আমাদের জন্য সময়োপযোগি সেটি আমাদের বাছাই করে নিতে হবে। এছাড়া আমরা কিভাবে আমরা আরও নতুন নতুন আইটেম, নতুন নতুন টুলস নিয়ে আসতে পারি সেই চিন্তাও করতে হবে। যার মাধ্যমে আমাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বেনিফিটেট হবে। একইসঙ্গে আমাদের বাজারটি আরও সুন্দর, স্বচ্ছ ও প্রসারিত হবে। আর শুধু পদক্ষেপ নিলেই চলবে না; এসব পদক্ষেপ সম্পর্কে সংশ্লিষ্টদের জ্ঞান আরও সমৃদ্ধ করতে হবে। কিভাবে এসব পদক্ষেপসমূহ বাস্তবায়ণ করা যায় সেসব বিষয়ে সকলকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে।

 

‘অন্য দেশের অনেক ভালো পলিসি হয়তো আমাদের দেশের জন্য মন্দের কারণও হতে পারে। তাই রেগুলেটরদের জন্যও বিনিয়োগ শিক্ষার প্রয়োজন। তা নাহলে কোনটি আমাদের জন্য ভালো আর কোনটি মন্দ-তা বিচার-বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা আমাদের থাকবে না। পাশাপাশি তথ্য ও প্রযুক্তিতে রেগুলেটরদেরকে আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।’

 

আমাদের মনে রাখতে হবে, একটি দেশের অনেক ভালো পলিসি হয়তো আমাদের দেশের জন্য অনেক মন্দও হতে পারে। তাই রেগুলেটরদের জন্যও বিনিয়োগ শিক্ষার প্রয়োজন। তা নাহলে কোনটি আমাদের জন্য ভালো আর কোনটি মন্দ-তা আমরা বুঝতে পারবো না। এসব বিষয়াদি বিচার-বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা আমাদের থাকতে হবে। পাশাপাশি তথ্য ও প্রযুক্তিতে রেগুলেটরদেরকে আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। এখন পারিপার্শ্বিক যে অবস্থা তাতে তথ্য-প্রযুক্তিতে দখলদারিত্ব না থাকলে হয়তো কাজ-কর্মে অনেক পিছিয়ে পড়তে হবে। তাই এমনভাবে তথ্য-প্রযুক্তিকে লব্ধ করতে হবে যেন যেকোনো স্থানে থেকে ২৪ ঘন্টা-ই কাজ করা যায়। আইটিতে দক্ষতা বা দখরদারিত্ব থাকলে কাজের ক্ষেত্রে সময় সাশ্রয় হবে, দূর্নীতি কমবে, ট্রান্সপারেন্সি থাকবে। এছাড়া কর্মস্থল থেকে দূরে থাকলেও কাজ সম্পন্ন করা যাবে। পাশাপাশি অবসর সময়েও অনেক কাজ শেষ করা যাবে। তাই এ বিষয়টি এখন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই মূহুর্তে আমি মনে করি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি বিনিয়োগ শিক্ষা বা ফিনান্সিয়াল লিটারেসি সম্পর্কে আরও বেশি পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা যত বেশি মানুষকে এই কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসতে পারবো ততই আমাদের দেশের অর্থনীতির জন্য এবং পুঁজিবাজারের জন্য মঙ্গলজনক হবে।

 

‘এই দেশটাকে নিয়ে আমাদের সরকার প্রধান যেভাবে স্বপ্ন দেখছেন এবং সেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন তাতে তার সাথে গতি মিলিয়ে চলতে হলে আমাদের আরও অনেক বেশি কাজ করতে হবে। হাজারো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে হলেও আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আর পুঁজিবাজারের ক্ষেত্রে অবশ্যই দীর্ঘমেয়াদী পুঁজির যে সংস্থান তা আমাদেরকে করতেই হবে।’

 

পুঁজিবাজারে দক্ষ লোকবল তৈরি করতে আমাদের দুটি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। একটি বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেট (বিআইসিএম) এবং আরেকটি হলো বাংলাদেশ একাডেমি অব সিকিউরিটিজ মার্কেট (বিএএসএম)। এ দুটি প্রতিষ্ঠানকে আমরা ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু করেছি। এখানে কিভাবে আরও দক্ষ প্রশিক্ষক নিযুক্ত করা যায়, কিভাবে আরও বেশি বিনিয়োগকারীকে ট্রেনিং, ওয়ার্কশপসহ বিভিন্ন মেয়াদী কোর্সের আওতায় আনা যায়-তা নিয়ে আমরা কাজ করছি। প্রয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্য কোনো বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে এ্যাফিলিয়েটেড করে প্রতিষ্ঠানগুলোকে কিভাবে আরও সমৃদ্ধ করা যায়-তা নিয়েও কাজ চলছে। আমরা এসব প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যাপক পরিমানে দক্ষ লোকবল তৈরি করতে চাই। এসব দক্ষ লোকবল যখন আর্থিক খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সম্পৃক্ত হবে তখন স্বাভাবিকভাবেই এ খাতটিতে বর্তমান যে ঘাটতি রয়েছে তা মিটে যাবে। এসব দক্ষ ও প্রশিক্ষিত লোকবলই হবে আমাদের সম্পদ। আর এই মানবসম্পদকে কাজে লাগিয়েই আমরা এগিয়ে যাবো। আমাদের দেশের আর্থিক খাত একটা শক্ত ও মজবুত ভীতের ওপর দাড়াতে পারবে। তবে এসব কাজ একা কেউই করতে পারবে না। এসব ক্ষেত্রে সরকার খুবই আন্তরিক। সরকার আমাদেরকে এসব ক্ষেত্রে সার্বিক সহযোগিতা করছে। তাই আমাদের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষ, অংশীজন, সংবাদমাধ্যমসহ সকলকেই এসব বিষয় নিয়ে কাজ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট সকলকে আমি বিশেষভাবে অনুরোধ করবো যেনো সবাই এসব বিষয়াদিগুলো নিয়ে আন্তরিকভাবে কাজ করেন।

 

‘পুঁজিবাজারে দক্ষ লোকবল তৈরি করতে আমাদের দুটি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। একটি ‘বিআইসিএম’ এবং আরেকটি হলো ‘বিএএসএম’। এ দুটি প্রতিষ্ঠান আমরা ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু করেছি। এখানে কিভাবে আরও দক্ষ প্রশিক্ষক নিযুক্ত করা যায়, কিভাবে আরও বেশি মানুষকে ট্রেনিং, ওয়ার্কশপসহ বিভিন্ন মেয়াদী কোর্সের আওতায় আনা যায়-তা নিয়ে আমরা কাজ করছি।’

 

আমাদেরকে বুঝতে হবে যে, এই মূহুর্তে দেশকে এগিয়ে নিতে হলে কিংবা দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে হলে ফিনান্সিয়াল লিটারেসির প্রসারের কোনো বিকল্প নেই। একমাত্র এটিই হবে আমাদের সামনের দিনগুলোতে শক্তিশালী অবস্থানে নেওয়ার একটি অন্যতম পাথেয়।

 

দেশে ইনোভেটিভ প্রোডাক্ট আনা এবং, বিশ্বব্যাপি চলমান অনেক বড় বড় ইনোভেটিভ ফাইনান্সিয়াল টুলসকে ব্যবহার করার জন্য ব্যাপক শিক্ষার প্রয়োজন। এই শিক্ষাটার জন্য আমাদের দেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনান্য বিশ্ববিদ্যালয়সমূহসহ যেসব প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করে যাচ্ছে তাদের সংখ্যার দিক দিক থেকে যতটুকু সক্ষমতা তা এই মূহুর্তে অপ্রতুল। এসব বিষয় নিয়ে আমাদের আরও অনেক বেশি কাজ করতে হবে। আমাদেরকে আরও মানুষকে ফিনান্সিয়াল লিটারেসি বা ফাইনান্সিয়াল এডুকেশনের আওতায় আনতে হবে। এ সম্পর্কে আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।

 

আমাদের রেগুলেটরদেরকে শিখতে হবে যে, আমরা আরও কি কি নতুন আইটেম, নতুন নতুন টুলস, নতুন নতুন প্রোডাক্ট, নতুন নতুন রুলস-রেগুলেশনস নিয়ে আসতে পারি। যার মাধ্যমে দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বেনিফিটেট হবে, বেটার গভর্ন্যান্স প্রতিষ্ঠিত হবে। একইসঙ্গে একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে যখন একটি উন্নত রাষ্ট্রের কালচার বা প্রোডাক্টগুলো আসতে শুরু করে, সেগুলো সম্পর্কে যেনো সবাই পরিচিত হতে পারে, সেসব টুলসগুলো যেনো সবাই ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারে-সেজন্য শিক্ষা বা প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। আর এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে রেগুলেটরদের।

 

‘শুধু বিনিয়োগকারকেই নয়, যারা বিনিয়োগকারীদের নিয়ে কাজ করেন তাদেরকেও ফিনান্সিয়াল লিটারেসিতে প্রশিক্ষিত হতে হবে। এছাড়া ব্রোকারেজ হাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংক, ব্যাংকস বা অনান্য ফিনান্সিয়াল ইন্সটিটিউশন্সগুলোকেও হতে হবে আরও অনেক বেশি আপডেটেড ও ইনোভেটিভ।’

 

পুঁজিবাজারে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, অনেক বছর যাবৎই আমরা শুধু আইপিও নির্ভর বা ইক্যুইটিবেজড পুঁজিবাজার নিয়েই কথাবার্তা বলে আসছি। এরমধ্যে অনেকে আবার শুধু বিও একাউন্ট নিয়েই কাজ করছে। কিন্তু যারাই কাজ করছে তাদেরও ওই শিক্ষাটি এখনো পর্যাপ্ত নেই। ফলে অন্যের পরামর্শ কিংবা প্ররোচনায় ভুল খাতে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন বিনিয়োগকারীরা। এটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। আবার যারা বিনিয়োগকারীদেরকে নানাভাবে বুঝিয়ে পুঁজিবাজারে আনছেন তাদেরও পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ নেই। তাই শুধু বিনিয়োগকারকেই নয়, যারা বিনিয়োগকারীদের নিয়ে কাজ করেন তাদেরকেও ফিনান্সিয়াল লিটারেসিতে প্রশিক্ষিত হতে হবে। তাদেরকেও আপডেটেড হতে হবে এবং পরিবর্তনশীল আর্থসামাজিক ব্যবস্থার সাথে তাদেরকে আরও বেশি নিজেদেরকে সংযুক্ত রাখতে হবে। এছাড়া তাদের উপরে যারা আছেন যেমন- ব্রোকারেজ হাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংক, ব্যাংকস বা অনান্য ফিনান্সিয়াল ইন্সটিটিউশন্স তাদেরকেও হতে হবে আরও অনেক বেশি আপডেটেড। তাদেরকে হতে হবে অনেক বেশি ইনোভেটিভ। তাদের রিসার্চ এন্ড ইনকোভেশন সেন্টার থাকতে হবে। তারা সেখান থেকে শিক্ষা লাভ করে গবেষণালব্ধ তথ্য-উপাত্ত বের করে আনবে। একইসঙ্গে সেখান থেকে প্রাপ্ত গবেষণালব্ধ জ্ঞান তারা সকলের মধ্যে ছড়িয়ে দেবে। আর তাদের সকলকে সার্ভ করার জন্য থাকতে হবে প্রোপার রেগুলেটর। আর রেগুলেটরদের অবশ্যই তথ্য-প্রযুক্তিতে দক্ষ হতে হবে।

 

এক প্রশ্নের জবাবে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, সরকারের ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নকে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে কোভিড ১৯। তবে জীবনের সবকিছুতেই আমাদেরকে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এগিয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের লক্ষ্যকে ঠিক রাখতে হবে। লক্ষ্য যদি ছোট হয় তাহলেও চ্যালেঞ্জও ছোট হবে। আর লক্ষ্য যদি বড় হয় তবে চ্যালেঞ্জও বড় হবে। এই দেশটাকে নিয়ে আমাদের সরকার প্রধান যেভাবে স্বপ্ন দেখছেন এবং সেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন তাতে তার সাথে গতি মিলিয়ে চলতে হলে আমাদের আরও অনেক বেশি কাজ করতে হবে। হাজারো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে হলেও আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আর পুঁজিবাজার ও শিল্প-বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অবশ্যই দীর্ঘমেয়াদী পুঁজির যে সংস্থান তা আমাদেরকে করতেই হবে। এক্ষেত্রে ব্যাংক শুধু শর্টটার্ম ও মিডটার্ম ফাইন্যান্সিং নিয়ে কাজ করবে। আর পুঁজিবাজার লংটার্ম ফাইন্যান্সিং নিয়ে কাজ করবে। আমরা এসব বিষয়াদি নিয়ে কাজ করছি।

‘পুঁজিবাজারকে অর্থনীতির মূল স্রোতে নিয়ে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমরা ইতোমধ্যেই বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছি। গত কয়েক বছরে যে আইপিওগুলো দেওয়া হয়েছে তা পৃথিবীর অনান্য দেশগুলোর তুলনায় খুবই কম। আমরা এখন দেখে-শুনে ভাল কিছু আইপিও দেওয়ার চেষ্ঠা করছি। সেই সাথে বন্ড মার্কেটকে আরও শক্তিশালী করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’

 

পুঁজিবাজারকে অর্থনীতির মূল স্রোতে নিয়ে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমরা ইতোমধ্যেই বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছি। পুঁজিবাজারে গত কয়েক বছর ধরে আইপিও নেই বললেই চলে। গত কয়েক বছরে যে আইপিওগুলো দেওয়া হয়েছে তা সংখ্যার দিক থেকে হিসেব করলে পৃথিবীর অনান্য দেশগুলোর তুলনায় খুবই কম। এই মার্কেটাকেওতো আমাদের ভাইব্রেন্ট রাখতে হবে। এখানেও অনেক অংশীজন রয়েছে। আমরা এখন দেখে শুনে ভাল কিছু আইপিও দেওয়ার চেষ্ঠা করছি। সেই সাথে বন্ড মার্কেটকে আরও শক্তিশালী করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সেকেন্ডারি মার্কেটে বন্ডের লেনদেন চালু করার কাজ চলছে। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি লংটার্ম ফাইন্যান্সিং করতে যেয়ে ব্যাংকগুলো অনেক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এক্ষেত্রে লোনগুলো সব ক্লাসিফাইড হয়ে যাচ্ছে। এটি ইচ্ছেকৃত বা অনিচ্ছাকৃত দুইভাবেই হতে পারে। এ থেকে মুক্তির একটিই পথ-আর তা হলো বন্ড। তাই আমরা বন্ড মার্কেটকে শক্তিশালী করতে কাজ করছি।

 

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মেয়াদান্তে আমি দেখতে চাই ক্যাপিটাল মার্কেট তার আসল চরিত্র খুঁজে পাবে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর আদলে আমাদের পুঁজিবাজারও দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের প্রধানতম উৎস হবে। আর আমাদের অর্থনীতিতে পুঁজিবাজারের অবদান আরও দৃশ্যমান হবে। সেজন্য আমি সংশ্লিষ্ট সকলের দোয়া ও সহযোগতা চাই।

 

(ডিএফই/এমআর/এসএএম/১০ অক্টোবর ২০২০)


Comment As:

Comment (0)