ধূমপানের ক্ষতি সম্পর্কে সচেতনতামূলক প্রচারণা

‘এই বিড়ি বা সিগারেটটি খেলে কী ক্ষতি হবে?’

ধূমপানের ক্ষতি সম্পর্কে সচেতনতামূলক প্রচারণা

নিজস্ব প্রতিবেদক: বহু বছর ধরে তামাক কোম্পানিগুলো সিগারেট সেবন বা ধূমপানকে আকর্ষণীয় করে নাটক-সিনেমায় তুলে ধরেছে। ফলে তরুণদের একটা অংশ ধূমপান শুরু করে, তাদের অনেকে পরে অন্যান্য মাদকের নেশায় ধাবিত হয়েছে। দীর্ঘদিন ধূমপানের কারণে অনেকে প্রাণঘাতী বিভিন্ন রোগে মারা গেছে। কিন্তু ব্যবসার প্রসারে তামাক কোম্পানিগুলে বিভিন্ন উপায়ে ধূমপানকে আকর্ষণীয় হিসাবে তুলে ধরছে। তামাক কোম্পানির এমন মিথ্যা প্রচারণা সম্পর্কে ধূমপায়ী ও পরিবারের সদস্যদের জানানোর জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অধীন জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল ৮মাস ব্যাপী প্রচারণা কর্মসূচি শুরু করেছে। এর আওতায় মোট ৪টি ভিডিওচিত্র যথাক্রমে সিগারেট বা বিড়িটি খেলে কী ক্ষতি, তামাক কোম্পানির প্রচার-প্রসার আমাদের হাহাকার, শতভাগ ধূমপানমুক্ত পাবলিক প্লেস এবং পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতি - প্রতিটি দু’মাস করে টিভি চ্যানেলে প্রচার করা হবে। বাংলাদেশ সরকারের রাজস্ব বরাদ্দের আওতায় এসব টিভি স্পট বাংলাদেশ টেলিভিশনে এবং স্টপ টোব্যাকো বাংলাদেশ এর বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন: ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার, ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত হবে।

বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে নিবেদিত সংস্থা ভাইটাল স্ট্রাটেজিস এর কারিগরি সহায়তায় বিভিন্ন দেশে গবেষণার আলোকে এসব ভিডিওচিত্র নির্মাণ করা হয়েছে। নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে প্রচারিত হবে “সিগারেট বা বিড়িটি খেলে কী ক্ষতি” শিরোনামের আত্মজিজ্ঞাসামূলক ভিডিওচিত্র। এতে একজন ধূমপায়ী নিজেকে প্রশ্ন করছেন যে, এই সিগারেট বা বিড়িটি খেলে আমার কী ক্ষতি হবে। স্ট্রোকে চলৎশক্তি হারিয়ে আমি আমার পরিবারের ওপর বোঝা হয়ে দাঁড়াবো না তো! ফুসফুসের ক্যান্সার হয় যদি, কিংবা মুখের ক্যান্সার, অথবা হার্টের অসুখ বা গলার ক্যান্সার কিংবা তীব্র শ্বাসকষ্ট! এরপর থেকে যখনি সিগারেট বা বিড়ি খাওয়ার কথা মাথায় আসবে একবার হলেও নিজেকে অবশ্যই জিজ্ঞাসা করুন, এই সিগারেট বা বিড়িটি খেলে আমার কী ক্ষতি হবে? সবশেষে সবার প্রতি আহবান জানানো হয়েছে যে, তামাক ছাড়ুন, আজই।

ভাইটাল স্ট্রাটেজিস নির্মিত এ ভিডিওচিত্র ভারতসহ বিভিন্ন দেশে প্রচারিত হয়েছে। যা পরবর্তীতে বাংলাদেশের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে। ভাইটাল স্ট্রাটেজিস এর হেড অব প্রোগ্রামস, বাংলাদেশ মো. শফিকুল ইসলাম আশা প্রকাশ করে বলেন, মাস মিডিয়া ও ডিজিটাল মিডিয়ার মাধ্যমে সমন্বিত এ প্রচারণা ধূমপায়ী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ধূমপানের প্রাণঘাতী ক্ষতি সম্পর্কে সচেতন করতে এবং ধূমপায়ীদের ধূমপান বর্জন করতে উৎসাহী করে তুলবে। তামাকের যে বহুমাত্রিক ক্ষতি এ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে জোরালো বার্তা এ বিজ্ঞাপনে তুলে ধরা হয়েছে। ধূমপান করলে স্ট্রোক, হার্ট এটাক, ফুসফুস ক্যান্সার, গলার ক্যান্সার, ফুসফুসের দীর্ঘমেয়াদী রোগ হয় -এগুলো বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। এ বিষয়গুলোই প্রচারণা উপকরণে তুলে ধরা হয়েছে। তিনি সময়োচিত প্রচারণা কর্মসূচি শুরু করায় জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগকে ধন্যবাদ জানান।

 উল্লেখ্য, সিগারেটের ধোঁয়ায় ৭০০০ ক্ষতিকর রাসায়নিক রয়েছে, যার মধ্যে অন্তত ৭০টি রাসায়নিক মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গে ক্যান্সার সৃষ্টি করে (সার্জন জেনারেল প্রতিবেদন ২০১০, যুক্তরাষ্ট্র)। ফুসফুস ক্যান্সার, ফুসফুস ও শ্বাসনালীর দীর্ঘমেয়াদী রোগ, হৃদরোগ, স্ট্রোক, সিওপিডিসহ একজন ধূমপায়ীর যেসব অসংক্রামক রোগ হতে পারে, পরোক্ষ ধূমপানের কারণে অধূমপায়ীরও এসব রোগ হতে পারে। এছাড়া অকাল গর্ভপাত বা মৃত সন্তান প্রসব এবং শিশুদের হাঁপানিসহ শ্বাসকষ্ট বা হঠাৎ মৃত্যুর ঝুঁকি দেখা দিতে পারে। তামাকজাত দ্রব্য সেবনে পৃথিবীতে বছরে ৮৭ লক্ষাধিক মৃত্যুবরণ করে (দি টোব্যাকো এটলাস ২০২২)।

বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো কর্তৃক পরিচালিত গ্লোবাল এডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে (গ্যাটস) ২০১৭ -এ দেখা যায়, বাংলাদেশে ১৫ উর্ধ জনগোষ্ঠীর ১৮% ধূমপান করে। বিশেষ করে, দরিদ্র, নিরক্ষর ও স্বল্পশিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে ধূমপানের হার বেশি। এছাড়া পুরুষের মধ্যে ধূমপানের হার বেশি। তামাকের কারণে বাংলাদেশে বছরে ১ লক্ষ ৬১ হাজারের অধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করে (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৮)।

এ প্রচারনা ধূমপানের ক্ষতিকর বিষয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে। এতে পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহন শতভাগ ধূমপানমুক্ত রাখার ক্ষেত্রে মানুষের অংশগ্রহণ বাড়বে। ফলে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

বিনিয়োগবার্তা/কেএইচকে//


Comment As:

Comment (0)